১২ই মার্চ, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ ২৭শে ফাল্গুন, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ রাত ১০:২১ বুধবার
  1. আন্তর্জাতিক
  2. কমলনগর উপজেলা
  3. কিশোরগঞ্জ জেলা
  4. খেলাধুলা
  5. চট্টগ্রাম জেলা
  6. জাতীয়
  7. তথ্য-প্রযুক্তি
  8. নারী ও শিশু
  9. নেত্রকোনা জেলা
  10. নোয়াখালী জেলা
  11. ফরিদগঞ্জ
  12. ফেনী জেলা
  13. বিনোদন
  14. ভোলা জেলা
  15. ময়মনসিংহ জেলা

রামগতির বয়ারচরবাসীর আতংক আন্ত:জেলা ডাকাত সর্দার তেলি আবদুর রব

প্রতিবেদক
মোহাম্মদ রাসেল পাটওয়ারী
অক্টোবর ১৩, ২০২৪ ৫:৪২ অপরাহ্ণ

মুহাম্মদ নিজাম উদ্দিন, রামগতি (লক্ষ্মীপুর) প্রতিনিধি: জীবনের শুরুতে ছিলেন দিনমজুর, তারপর শুরু করেন শুটকি মাছের ব্যবসা এরপর হলেন চিংড়ি পোনার হকার সেখান থেকে আওয়ামী লীগের ক্ষমতার পনের বছরে হয়ে গেলেন কাড়ি কাড়ি অর্থবিত্ত আর অঢেল সম্পদের মালিক।

লক্ষ্মীপুরের রামগতির চরগাজী ইউনিয়নের আন্ত:জেলা ডাকাত দলের গ্যাং লিডার, চরাঞ্চলের চাঁদাবাজ, মেঘনা নদীর একচ্ছত্র মাদক ও অস্র চোরাকারবারিদের মাষ্টারমাইন্ড, অস্রের কারখানার মালিক এবং ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সভাপতি তেলি আবদুর রব রয়েছে এখনো ধরা ছোঁয়ার বাইরে। বহাল তবিয়তে চালিয়ে যাচ্ছে তার অপরাধ সাম্রাজ্য চরাঞ্চলের জমিতে হাল আর মেঘনা নদীতে জাল ফেললেই তার বাহিনীকে এখনো গুনতে হচ্ছে চাঁদা অন্যথায় অপহরণ নির্যাতন। তেলি আবদুর রব চরগাজী ইউনিয়নের ৬নং ওয়ার্ডের মৃত সাহে আলমের ছেলে।

জানাযায়, রামগতি উপজেলা আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক আবদুল ওয়াহেদের একমাত্র আর্শীবাদপুষ্ট আবদুর রব। তার সাথে যুক্ত হয়েছে বহিস্কৃত বিএনপি নেতা সাবেক চেয়ারম্যান মীর আক্তার হোসেন বাচ্চু। এ তিন দুষ্টুচক্র সংঘবদ্ধ অস্রবাজি, চুরি-ডাকাতি, কমিশন ও দখল বাণিজ্য, ভূমিহীন ও জেলেদের কাছ থেকে চাঁদাবাজি, সন্ত্রাস, নৈরাজ্য ও নির্যাতন চালিয়ে তটস্থ করে রেখেছে চরাঞ্চলের মানুষদের। নদীতে এবং মাছঘাটে চালিয়েছে কমিশন বাণিজ্য। ভয়াবহ মাদক-অস্র চোরাচালান, কালোবাজারি, দখল-কমিশন বাণিজ্য করে কোটি কোটি টাকা হাতিয়ে নেন চক্রটি।

স্থানীয় মো. শরীফ ও তৌহিদ সহ অনেকে জানায়, আওয়ামী লীগ নেতা আবদুল ওয়াহেদ জুলাই বিপ্লবের পর আত্নগোপনে থাকলেও তার বিশ্বস্ত সহযোগী তেলি আবদুর রবকে দিয়ে চালাচ্ছেন রামরাজত্ব। দখল কওে রেখেছেন টাংকিঘাট এলাকার ২ শতাধিক দোকান, মাছঘাট ও মেঘনা নদী। সূত্রমতে, রবকে তার ওয়ার্কশপের আড়ালে অস্রের কারখানা থেকে তৈরিকৃত বিপুল পরিমাণের দেশীয় অস্র সহ দুইবার আটক করে কোষ্টগার্ড ও র‌্যাব। তাদের চত্রছায়ায় রয়েছে আন্ত:জেলার খুনি ও ডাকাত দলের বিশাল বাহিনী। আবদুর রব তার ভাতিজা জামশেদ, ইদ্রিছ, মোস্তফা ডাকাত, হান্নান, শাহাবুদ্দিন, শাহীন সহ অসংখ্য ডাকাত বাহিনী নিয়ে এখনো রয়েছে বহাল তবিয়তে। তেলি রবের রয়েছে ৫০ এর অধিক মাছ ধরার ট্রলার যেগুলো আন্ত:মহাদেশীয় সার, মাদক, অস্র চোরাচালানে নিযুক্ত। আবদুর রব বয়ারচরের ট্রিপল মার্ডার, হাতিয়ার আরিফ মার্ডার, কবির মার্ডার সহ রামগতি-সূবর্ণচর-হাতিয়ায় হত্যা, অস্র, ডাকাতি, পুলিশ ক্যাম্প লুট সহ অসংখ্য মামলার এজাহারভূক্ত আসামী। রব ও তার বাহিনীর বিরুদ্ধে রামগতি থানার মামলা নং- ৫তাং-১৩/০২/১৬, জিআর-১৯/২০০৫, জিআর-১৯/২০১৮, হাতিয়া থানার মামলা নং- ১২৩/০৬/০৪/১৬, জিআর নং-১৪১/২০২৩ সহ মোট ১৭টি মামলার এজাহারভূক্ত আসামী।

সূত্র আরো জানায়, তেলি আবদুর রব ২০২৩ সালের অক্টোবর মাসে তার বাহিনী নিয়ে অস্র প্রদর্শন করে বয়ারচর পুলিশ ক্যাম্পে হামলা ও লুটপাট করলে পুলিশ তার বিরুদ্ধে হাতিয়া থানায় ৩টি মামলা দায়ের করে। তার অস্রের ব্যবসার প্রধান এজেন্ট আলোচিত ডাকাত সালাউদ্দিন ও হরণী ইউনিয়নের বয়ারচর টাংকি বাজারের শফিকের ছেলে ইকবাল হোসেন বাবলু ডাকাত। এছাড়া তার নিয়ন্ত্রিত বাহিনীতে রয়েছে সফিকের ছেলে সুজন, কবিরের ছেলে সোহেল, জয়নাল ফিটারের ছেলে শাহীন, মোনাফের ছেলে ইদ্রিছ, নোয়া সর্দারের ছেলে জামশেদ, মোতাহের, আনোয়ার, সায়েদ, লেংগা মাইনুদ্দির ছেলে আজগর, রাজু, বেড়ি আবদুল্যার ছেলে রিপন, বেলাল, রহিম খনকারের ছেলে হানিফ, মনির, বাচ্চু, ফরেষ্টের গাছ চোর মনির, সিরাজের ছেলে সারোয়ার ও জাবেরের ছেলে সাহাবুদ্দিন ডাকাত। এ ডাকাত বাহিনীর সদস্যরা সকলেই ধর্ষন, খুন, ডাকাতি, পুলিশের অস্র লুট সহ অসংখ্য মামলার এজাহারভূক্ত আসামী।

অনুসন্ধানে জানা যায়, চরাঞ্চলের মানুষের আতংক তেলি রবের সাথে নতুন করে যুক্ত হয়েছে আরেক কুখ্যাত অস্রবাজ গ্যাং লিডার বিএনপি’র বহিস্কৃত নেতা মীর আক্তার হোসেন বাচ্চু। দ্বীর্ঘদিন থেকে বাচ্চু চেয়ারম্যান তার লালিত কুখ্যাত সাইফুল, মাংতা কালা, শামীম, বাচেক, জামাল মাঝি সহ বেশ কিছু ডাকাত বাহিনী দিয়ে এখনো বয়ারচর এলাকায় অরাজকতা চালানোর চেষ্টায় লিপ্ত রয়েছে। ৫ আগষ্ট তারা ভয়াবহ তান্ডব ও নাশকতা, দখল বাণিজ্য চালায় পুরো ইউনিয়ন জুড়ে। বাচ্চু চেয়ারম্যান ১৯৯৯ সালের প্রথম দিকে তার নিজ বাড়ী থেকে রকেট লাঞ্চার, পিস্তল, রাইফেল, বন্দুক এবং বিপুল পরিমাণের অস্র এবং ৫৫ জন ডাকাত সহ আটক হয়ে প্রায় ২ বছর কারাভোগ করেন।

তেলি আবদুর রব তার গডফাদার উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আবদুল ওয়াহেদের ক্ষমতার জোরে তার গোডাউন থেকে ২শত বস্তা সরকারী চাল সহ আটক হলেও ক্ষমতার জোরে ছাড়া পেয়ে যায় এবং কিছুদিন পর সেই চাল চরজব্বর থানা থেকে ছাড়িয়ে এনে জনগনের মাঝে বিলি করেন ওয়াহেদ।

এছাড়া, তেলি আবদুর রব টাংকি মাছ ঘাটে সরকারী যায়গা দখল করে প্রায় ১৫০টি দোকান নির্মাণ করে যা থেকে সে মাসে কয়েক লক্ষ টাকা আয় করার অভিযোগ রয়েছে তার বিরুদ্ধে। বয়ারচর বেড়িবাঁধের বাইরে বিশাল ঝাউ ও বিভিন্ন বৃক্ষের বাগান তার বাহিনীর মাধ্যমে বিক্রি করে লুফে নেন কোটি টাকা। চরাঞ্চল নিয়ন্ত্রনে নিয়ে ক্ষমতার প্রতাপে গড়ে তুলেন অপরাধের স্বর্গরাজ্য, এখানে সবই চলে তার কথায়। সকল মাছ ধরার নৌযানকে বাধ্যতামূলক ভাবে মাছ বিক্রি করতে হতো তার ও আবদুল ওয়াহেদের গদিতে। তার কথার অবাধ্যে চলতো ভয়াবহ নির্যাতন। তেলি রবের অপরাধ জগতের সাম্রাজ্য এখনো রয়েছে বহাল তবিয়তে। তেলি আবদুর রব তার গডফাদার আওয়ামী লীগ নেতা আবদুল ওয়াহেদ ও মীর আক্তার হোসেন বাচ্চু চেয়ারম্যানের নির্দেশনায় বিশাল ডাকাত বাহিনী নিয়ে এখনো সক্রিয় রয়েছে। চুরি, ডাকাতি, মাছঘাট দখল বাণিজ্যর জন্য যে কোন সময়ে চালাতে পারে সশস্র হামলা।

এ চক্রটি পলাতক থাকলেও যে কোন মূহূর্ত্যে ফিরে এসে শুরু করবে চাঁদাবাজি, চুরি-ডাকাতি, অস্র ব্যবসা, অত্যাচার নির্যাতন এমন আশংকায় ভয়ে তটস্থ চরাঞ্চলবাসী।

এ সকল অভিযোগ অস্বীকার করে অভিযুক্ত তেলি আবদুর রব জানান, আমি কোন অপরাধের সহিত জড়িত নই। এগুলো আমার বিরুদ্ধে রাজনৈতিক ষড়যন্ত্র।

চরগাজী ইউপি সাবেক চেয়ারম্যান মীর আক্তার হোসেন বাচ্চু জানান, একটি পক্ষ আমার বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র করে আমাকে ফাঁসাতে অপপ্রচার চালাচ্ছে। কখনো এ ধরনের অপরাধের সাথে জড়িত ছিলাম না।

উপজেলা আ’লীগ সাধারণ সম্পাদক আবদুল ওয়াহেদের কাছে জানতে চাইলে তিনি ঢাকায় ব্যস্ত আছেন বলে ফোন কেটে দেন।

রামগতি থানা অফিসার ইনচার্জ মো. কবির হোসেন বলেন, আমি এ থানায় নতুন যোগদান করেছি। তার বিষয়ে খোজখবর নিয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া হবে।

Please follow and like us:
error0
Tweet 20
fb-share-icon20

সর্বশেষ - কমলনগর উপজেলা